সুনামগঞ্জ জেলার পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে সেবা নিতে গিয়ে দুর্নীতি ও হয়রানির মুখে পড়ছেন সাধারণ গ্রাহকরা। বিদ্যুতের নতুন সংযোগ, স্থানান্তর কিংবা ঝড়ে নষ্ট হওয়া মিটার পরিবর্তনের মতো ন্যূনতম পরিষেবার জন্যও দিতে হচ্ছে ঘুষ। সরাসরি অফিসে গিয়েও কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না। অথচ তথাকথিত ইলেক্ট্রিশিয়ান বা দালালের মাধ্যমে কয়েকগুণ টাকা দিলে দ্রুত সমাধান মিলছে।
একটি সুনামধন্য গণমাধ্যমের সাক্ষ্যাতকারে তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা ভুক্তভোগী শাহাব উদ্দিনের বক্তব্যে জানা যায় , অনলাইনে আবেদন করে মিটার পেয়েছিলেন। সাম্প্রতিক ঝড়ে মিটারটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে অফিসে জমা দেন। তারপর একাধিকবার অফিসে গেলেও মিটার ফেরত পাননি, জিজ্ঞেস করলে তারা ২ হাজার টাকা দাবি করে, টাকা ছাড়া কিচ্ছু হয় না।”
একই ধরনের অভিযোগ করছেন আরও অনেক ভুক্তভোগী। গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে একটি সক্রিয় “সিন্ডিকেট” কাজ করছে, যাদের সহযোগিতা ছাড়া সাধারণ গ্রাহকের জন্য কোনো কাজই সম্পন্ন করা সম্ভব নয়।
আগে বিদ্যুৎ সংযোগের ক্ষেত্রে ইলেক্ট্রিশিয়ানের ‘ওয়ারিং রিপোর্ট’ জমা দিতে হতো। এই সুযোগে অনেক ইলেক্ট্রিশিয়ান প্রতিটি আবেদনের জন্য তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করতেন। নিয়ম পরিবর্তন করে এখন গ্রাউন্ডিং রডের মেমো নম্বর জমা দিলেই কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, নিয়ম পাল্টালেও দুর্নীতি ও সিন্ডিকেট চক্রের দাপট আগের মতোই রয়ে গেছে।
নতুন সংযোগ স্থাপন থেকে শুরু করে স্থানান্তর কিংবা দুর্যোগে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে পুনঃসংযোগ- সব ক্ষেত্রেই গ্রাহকদের ভুগতে হচ্ছে। অনলাইনে আবেদন করে সরকারি ফি পরিশোধ করেও মিলছে না সময়মতো সেবা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই সিন্ডিকেট চক্রের মূল কারিগর হচ্ছে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা। অভিযোগের সত্যতা গণমাধ্যমের কাছে স্বীকারও করেছেন বিদ্যুৎ অফিসের বর্তমান জেনারেল ম্যানেজার। তিনি জানান,
“সিন্ডিকেটের বিষয়ে আমরা জানি, তবে এটিকে ভাঙার ক্ষেত্রে আমরাও অনেকাংশে অসহায়।”
একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান যেখানে জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করার কথা, সেখানে দুর্নীতি ও সিন্ডিকেটের দাপটে সেবা পাওয়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে ভাগ্যের ব্যাপার।
সরকারি ফি পরিশোধ করেও যদি ঘুষ না দিলে সেবা না মেলে, তাহলে সাধারণ জনগণের পক্ষে ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায় করা কীভাবে সম্ভব? এই প্রশ্নের জবাব চাইছে সুনামগঞ্জের জনগণ।
দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ না নেওয়া হলে এই চক্র আরও শক্তিশালী হবে, এবং গ্রাহকদের দুর্ভোগ আরও বাড়বে- এমনটাই আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।