নিজস্ব প্রতিবেদক ::
সুনামগঞ্জ শহরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বুলচান্দ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ধারাবাহিক ভয়াবহ ফলাফল বিপর্যয়ে বিদ্যালয়টির শিক্ষার মান উন্নয়নে এবার ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিচ্ছেন জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। ঘোষণা দিয়েছেন— আগামী এক বছর বুলচান্দ থাকবে জেলা প্রশাসনের নিবিড় পরিচর্যায়।
বুধবার শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক শিক্ষা সম্মিলন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বুলচান্দ স্কুলের করুণ অবস্থা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন জেলা প্রশাসক। তিনি জানান, ইতোমধ্যে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে আগামী সোমবার স্কুল প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমাবেশ আহ্বান করা হয়েছে।
ড. ইলিয়াস মিয়া বলেন,
“শহরের একটি স্কুল বুলচান্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের ফলাফল খুবই খারাপ হচ্ছে দিন দিন। আমি হেডমাস্টারকে জিজ্ঞেস করলাম এমনটা কেন হচ্ছে। হেডমাস্টার বললেন, ২০১০ সালের পর থেকে এমন অবস্থা, আগে ভালো ছিল, তাহলে এখন ভালো করতেছেন না কেন, এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আমরা আগামী সোমবার বুলচান্দ স্কুলে অভিভাবকসহ কথা বলবো।
আমার জেলা পর্যায়ের অন্যান্য যারা সহকর্মী আছেন, তাদেরকে বলেছিলাম প্রত্যেকদিন দুই ঘন্টা সময় এই স্কুলকে দেয়ার জন্য, তারাও বলেছেন পারবেন। আমরা আগামী এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত এই স্কুলকে নিবিড় পরিচর্যা করবো।”
তিনি আরও যোগ করেন,
“আমরা চাই সুনামগঞ্জের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উন্নত হোক। এই জেলা যেন সারাদেশে একটি আদর্শ জেলার পরিচয়ে পরিচিত হয়। আগামী দিনে শিক্ষা নিয়ে কাজ করতে চাই। জেলা পরিষদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ চালু করব। তবে এ কাজে সফল হতে হলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। আপনারা এক পা এগুলে, আমরা এগোব দুই পা।”
এক সময়ের সুনামধন্য এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এখন ফলাফলের দিক থেকে জেলার অন্যতম পেছনের সারিতে। এত বড় এই স্কুলটিতে ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মাত্র ৩৮ জন শিক্ষার্থী , এরমধ্যে পাশ করেছে ১৩ জন। পাসের হার ৩৪.২১ শতাংশ। জিপিএ—৫ নেই একটিও।
এর আগের দুই বছরেও অবস্থা ছিল বিপর্যয়কর—
২০২৩ সালে: অংশগ্রহণ ৫৮ জন, পাশ করেছে ২৯ জন।
২০২৪ সালে: অংশগ্রহণ ৫৮ জন, পাশ করেছে মাত্র ৯ জন।
এই পরিসংখ্যান স্পষ্টভাবে তুলে ধরছে, বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান ধরে রাখার ক্ষেত্রে শিক্ষক মণ্ডলীর আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। ফলে বিদ্যালয়টির প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও শহরের সুধীজনদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমেও এ নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে একাধিক সুচিন্তিত বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন, যেখানে ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যালয়ের ধারাবাহিক অধঃপতনের পেছনে বর্তমান শিক্ষক মণ্ডলী ও পরিচালনা কমিটির দায়িত্বহীনতার বিষয়টি গভীর ভাবে উঠে এসেছে।
তবে এবারে পরিবর্তনের আশায় বুক বেঁধেছেন অনেকেই। জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে গৃহীত এই ‘নিবিড় পরিচর্যা’ কর্মসূচি যদি আন্তরিকভাবে বাস্তবায়ন হয়, তাহলে হয়তো আবারও হারানো গৌরব ফিরে পেতে পারে বুলচান্দ উচ্চ বিদ্যালয়।
এখন সময়ের অপেক্ষা— প্রশাসনের হস্তক্ষেপ, শিক্ষকদের জবাবদিহিতা এবং অভিভাবকদের সহযোগিতায় বুলচান্দ আবারও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে কি না, তা দেখারা অপেক্ষায় শহরের সুধী সমাজ ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীবৃন্দ।