ডেস্ক রিপোর্ট:
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট (AJI) সম্প্রতি একটি চাঞ্চল্যকর অনুসন্ধানী প্রামাণ্যচিত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে দাবি করা হয়েছে—বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের জুলাইয়ে সরকারবিরোধী গণআন্দোলন দমন করতে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন।
গোপন কল রেকর্ড ফাঁস
আলজাজিরার দাবি, তাদের হাতে এসেছে শেখ হাসিনার একাধিক গোপন টেলিফোন আলাপের রেকর্ডিং। যেখানে দেখা যায়, তিনি নিরাপত্তা বাহিনীকে ‘ওপেন ফায়ার’ অর্থাৎ ‘যেখানে পাবি, সেখানে গুলি করো’ নির্দেশ দিয়েছিলেন। এক ফোনালাপে শেখ হাসিনা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে বলেন:
“আমার নির্দেশ তো আগেই দেওয়া হয়ে গেছে। আমি তো পুরোপুরি ওপেন অর্ডার দিয়ে দিয়েছি। এখন ওরা মারবে, যেখানে পাবে সেখানে গুলি করবে… আমি তো এতদিন থামিয়ে রেখেছিলাম। আমি ছাত্রদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবছিলাম।”
অন্য এক রেকর্ডিংয়ে তাকে বলতে শোনা যায়:
“যেখানে তারা কোনো জটলা দেখছে, সেটি ওপর থেকে—এখন তো ওপর থেকেই হচ্ছে। এরই মধ্যে কয়েক জায়গায় শুরু হয়ে গেছে। কিছু সরেছে।”
প্রামাণ্যচিত্রে চিকিৎসকদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, অনেক আন্দোলনকারী হেলিকপ্টার থেকে চালানো গুলিতে নিহত বা গুরুতর আহত হয়েছেন।
নিহত ১৫০০, ছোঁড়া হয়েছে ৩০ লাখের বেশি গুলি
আলজাজিরার তদন্ত অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সেই তিন সপ্তাহব্যাপী অভ্যুত্থান-সদৃশ গণআন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১,৫০০ জন। আহত হয়েছেন ২৫,০০০ এরও বেশি মানুষ। সরকারের নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহার করেছে ৩০ লাখেরও বেশি রাউন্ড গুলি।
আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড ও ময়নাতদন্তে গড়মিল
আন্দোলনের অন্যতম মুখ হয়ে ওঠা ছাত্র আবু সাঈদের মৃত্যুকে ঘিরে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। আলজাজিরার দাবি, সরকার এই মৃত্যুর সত্যতা ধামাচাপা দিতে হুমকি, ঘুষ ও মিথ্যা প্রচার চালায়।
প্রামাণ্যচিত্রে দেখা যায়, শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পরিবর্তনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তদন্তে জানা যায়, আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাঁচবার পরিবর্তন করা হয় এবং গুলির বিষয়টি সরিয়ে ফেলা হয়।
পরবর্তীতে, আতঙ্কিত আবু সাঈদের পরিবারকে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এনে শেখ হাসিনার সঙ্গে ‘দেখা করার’ জন্য বাধ্য করা হয়।
ইন্টারনেট বন্ধে ‘কৌশল’
আলজাজিরার অনুসন্ধানে আরও উঠে আসে, কীভাবে সরকার পরিকল্পিতভাবে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয় যেন সহিংসতার ভিডিও ও ছবি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে না পৌঁছায়। ফাঁস হওয়া গোপন নথিপত্রে এসব কৌশলগত পরিকল্পনার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া: ‘রেকর্ডিং ভুয়া’
আলজাজিরাকে পাঠানো এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলেছে, “শেখ হাসিনা কখনোই প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেননি। ফাঁস হওয়া কল রেকর্ডগুলো ভুয়া এবং মনগড়া।”
তবে দলটি স্বীকার করেছে যে, আবু সাঈদের পরিবারের আতঙ্কের বিষয়টি দুঃখজনক। পাশাপাশি দাবি করেছে, “সরকারি বাহিনীর কোনো অপব্যবহার হয়ে থাকলে, তা তদন্তে শেখ হাসিনা নিজেই আগ্রহী ছিলেন।”
ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়ে আওয়ামী লীগের ব্যাখ্যা—আন্দোলনকারীদের ভাঙচুরে দেশের ইন্টারনেট অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, যার ফলে সাময়িক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
সম্পাদনা: দৈনিক তালাশ নিউজ ডেস্ক | সূত্র: আলজাজিরা ইনভেস্টিগেশন ইউনিট